Graft Versus Host Disease (GvHD): নিকট আত্মীয়দের মধ্যে রক্তের আদান-প্রদান মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে!

রাস্তা পারাপারের সময় শফিক সাহেব মারাত্মক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হলেন। তাঁকে তাৎক্ষণিক ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। তাঁর ক্ষতের পরিমাণ বেশী, যার কারণে তাকে অপারেশন করার প্রয়োজন হলো এবং অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে তাঁকে রক্ত দেওয়ারও প্রয়োজন হচ্ছিল। তখন তার ছেলে শরীফ তাকে রক্ত দিলেন। আমাদের মধ্যে একধরণের ধারণা প্রচলিত আছে যে, নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নিতে পারলে সূবিধা বেশী এবং নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশী জোর দেওয়া হয়।  কারণ এতে রক্তের শুদ্ধতা, রক্তদাতার সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বাংলাদেশে মোট সংগৃহীত রক্তের ৭০ ভাগ আসে নিকট আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে।

যাইহোক সফল অপারেশনের পর শফিক সাহেব সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর তার কিছু উপসর্গ দেখা গেল এবং হঠাৎ করে তার মৃত্যু হলো।
আপনার-আমার মনে হতে পারে, তার আয়ু শেষ তাই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান এর পর একটি কারণই খুঁজে পাওয়া গেল, তা হলো নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ক্ষেত্রে তার ছেলে ই ছিল তার মৃত্যুর কারণ।

এভাবে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে রক্ত আদান-প্রদান এর ফলে "ট্রান্সফিউশন অ্যাসোসিয়েটেড - গ্রাফ্ট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজ (TA-GvHD)'' নামে একধরনের বিরল মারাত্মক রোগ হতে পারে। এ রোগের কারণে মৃত্যুর হার প্রায় ৯০%।

নিকট আত্মীয় কারা?
নিকট আত্মীয় বলতে বাবা-মা, পুত্র-কন্যা,ভাই-বোন কে বোঝানো হয়।যেহেতু তাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বিদ্যমান, তাই প্রায় ৫০% জিন মিল পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে HLA(human leukocyte antigens) নামক এন্টিজেন মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

Graft vs Host Disease কি?
আমাদের শরীরের একমাত্র প্রতিরক্ষাকারী রক্তকণিকা হলো শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট। শ্বেত রক্তকণিকার একটি প্রকার হলো অদানাদার লিম্ফোসাইট। লিম্ফোসাইট আবার দুই ধরনেরঃ B লিম্ফোসাইট ও T লিম্ফোসাইট। T লিম্ফোসাইটকে cytotoxic T-cell হিসেবেও ডাকা হয়।
রক্তের মধ্যে থাকা T-lymphocyte এর কাজ হল শরীরে অপরিচিত কোন উপাদান কিংবা জীবাণু প্রবেশের সাথে সাথে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা এবং জীবাণুকে সরাসরি আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেওয়া। অসংখ্য জীবানুর সংক্রমন থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক প্রাণীর শরীরে এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এভাবে আমরা যখন অন্যের শরীর থেকে রক্ত, বোন ম্যারো বা কোন অঙ্গ (কিডনী,যকৃত ইত্যাদি) নিজের শরীরে নিতে চাই তখন সর্বপ্রথম দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে যথাযথ বৈশিষ্ট্যের মিল বা matching করে নিতে হয়। সাধারনত Matching করার সময় দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে HLA বা লিউকোসাইট এন্টিজেন এর মিল দেখা হয়। যদি তা না করা হয়, তখন গ্রহীতার cytotoxic T-cell সেই অঙ্গকে ধ্বংস করে, যাকে বলে graft rejection। এই প্রক্রিয়ায় অন্যের শরীর থেকে আসা T-cell ও ধ্বংস হয়ে যায়।
যদি দাতার শরীরের কিছু T-cell গ্রহীতার T-cell কর্তৃক ধ্বংস না হয়ে বেঁচে যায় এবং গ্রহীতার শরীরে সংখ্যা বৃদ্ধি করে একসময় গ্রহীতার কোষ কলাকেই আক্রমন করতে থাকে তখন এটাকে বলে Graft vs Host Disease (GVHD)।
GVHD ঘটতে গেলে অবশ্যই গ্রহীতার T-cell এর কার্যক্রম বন্ধ থাকতে হবে যেটাকে বলে immunosupression।
অর্থাৎ গ্রহীতার T-cell যদি দাতার T-cell কে নষ্ট করে দেয় তখন তাকে বলে Graft Rejection। আর দাতার T-cell যদি গ্রহীতার T-cell দ্বারা নষ্ট না হয়ে  গ্রহীতার শরীরে সংখ্যাবৃদ্ধি করে গ্রহীতার কোষ কলাকে আক্রমণ করে তখন তাকে বলে Graft vs Host Disease।

(GvHD রোগে আক্রান্ত রোগী) 

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আমরা হরহামেশা যে রক্ত পরিসঞ্চালন করছি তাতে GVHD হচ্ছে না কেন?
কারণ এক্ষেত্রে গ্রহীতার শরীরের T-cell দাতার T-cell কে আগেই ধ্বংস করে দেয়। যদি গ্রহীতার T- cell অবদমিত/বন্ধ অবস্থায় থাকে (immunosupression), সেরকম পরিস্থিতিতে রোগীকে রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে radiation দিয়ে দাতার T-cell কে আগে ধ্বংস করে নিতে হয়। Immunosupression এর কারনে transfusion associated GvHD এর ঝুঁকি থাকে।

কিন্তু নিকটাত্মীয়দের থেকে রক্ত নিলে এ রোগ কীভাবে হয়? 
যদি রক্ত দাতা ও গ্রহীতার HLA এর বিন্যাস এমন হয় যে, গ্রহীতার T-cell এর কাছে দাতার T-cell সহ কোষ কলা কে ‘আপন’ বা ‘self’ বলে মনে হয়; কিন্তু দাতার T-cell এর কাছে গ্রহীতার কোষ কলা কে শত্রু বা ‘non-self’ বলে মনে হয়। এমন পরিস্থিতিতে দাতার T-cell গ্রহীতার শরীরে সাদরে গৃহীত হয়, সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং পরবর্তীতে গ্রহীতার কোষ কলাকেই আক্রমন করে ধ্বংস করতে থাকে।

পরিশেষে, এ রোগের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো জিনগত মিল। নিকটাত্মীয়দের সাথে আমাদের জিনের প্রায় ৫০% মিল থাকতে পারে। আর এ কারণে human leukocyte antigen (HLA) নামক এন্টিজেন গুচ্ছেরও মিল থাকতে পারে। HLA নামক এই এন্টিজেন ই মূলত গ্রহীতা এবং দাতার মধ্যে এক ধরনের পার্থক্য তৈরী করে দেয়। দাতার কোষ কলাকে গ্রহিতার শরীরে বহিরাগত বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে।

তথ্যসূত্রঃ
[1] Tumer G, Simpson B, Roberts TK. Genetics, Human Major Histocompatibility Complex (MHC): https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK538218/
[2] https://hematologybd.org/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%9F-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0/

Post a Comment

It’s all about friendly conversation here. I'd love to hear your thoughts. Be sure to check back again because I do make every effort to reply to your commnts here. Keep it polite and on topic. You may need to refresh before your comment shows up!

Previous Post Next Post